ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগে অফিস খরচের নামে হাতিয়ে নেয়া টাকা ফেরত

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া ::  ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুত’ এই শ্লোগানে সারাদেশে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ‘আলোর ফেরিওয়ালা’র ব্যানারে মাত্র ৫ মিনিটে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে পল্লী বিদ্যুতের কক্সবাজারের চকরিয়া জোনাল অফিস। এরই অংশ হিসেবে চকরিয়া ও পেকুয়ার ১৮টি এবং বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাইতং ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের প্রায় ৭ হাজার গ্রাহক নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছেন। বর্তমান সরকারের চাওয়া অনুযায়ী মাত্র পাঁচ মিনিটে বিনামূল্যে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ প্রদানের কার্যক্রম কোন রকম ঘুষ-দুর্নীতি, অনিয়ম ও হয়রানি ছাড়াই সুষ্ঠুভাবে চলমান থাকলেও কতিপয় এক ইলেক্ট্রিশিয়ান তথা দালাল অফিস খরচের কথা বলে বেশ কয়েকজন গ্রাহকের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়।
ভুক্তভোগী গ্রাহকের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পেয়ে হাতিয়ে নেওয়া সেই টাকা ফেরত দিতে বাধ্য করা হয়েছে ওই দালালকে। পল্লী বিদ্যুতের চকরিয়া জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. মোসাদ্দেকুর রহমান এই উদ্যোগ নেওয়ায় সাধুবাদ জানিয়েছেন ভুক্তভোগী নতুন গ্রাহকেরা।
পল্লী বিদ্যুতের চকরিয়া জোনাল অফিসের ওয়ারিং পরিদর্শক গোপাল দাশ জানান, এই অফিসের নিয়ন্ত্রণাধীন বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাইতং বড় মুসলিম পাড়ার ৯ জন গ্রাহকের কাছ থেকে বিভিন্নখাতে অফিস খরচের কথা বলে কতিপয় দালাল মোটা টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে বিষয়টি ডিজিএম জানার পর ওই দালালকে শনাক্ত করে তার কাছ থেকে টাকা আদায় করে গ্রাহকদের ফেরত দেওয়া হয়। এ সময় কঙবাজার জেলা পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ডের প্যানেল চেয়ারম্যান ও চকরিয়া, পেকুয়া, বান্দরবানের লামার পরিচালক আলহাজ হায়দার আলী, চকরিয়া জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. মোসাদ্দেকুর রহমান, ফাইতং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জালাল উদ্দিন, ফাইতং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. জাকির সিকদারসহ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে এই টাকা ফেরত দেওয়া হয়।
টাকা ফেরত পাওয়া বড় মুসলিম পাড়ার গ্রাহক তপন শর্মা, আনোয়ার হোসেন, জিয়াবুল করিম, আলী আহমদ, শহিদুল ইসলাম জানান, তারা পল্লী বিদ্যুতের নতুন গ্রাহক হওয়ার জন্য অফিসে আবেদন করেন এবং সরকারি ফি জমা দেন। কিন্তু আবু নামের এক দালাল গিয়ে তাদেরকে জানান, অফিস খরচের টাকা না দিলে সংযোগ পাবেন না।
এতে ভড়কে গিয়ে তারা প্রায় ২০ হাজার ৫০ টাকা তুলে আবুর হাতে জমা দেন। কিন্তু সেই টাকার রশিদ না পাওয়ায় বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। এর পর চকরিয়া জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. মোসাদ্দেকুর রহমান সেই দালালকে শনাক্তপূর্বক হাতিয়ে নেওয়া টাকা ফেরত দিতে বাধ্য করেন এবং শনিবার সেই টাকা ফেরত পান। নতুন গ্রাহকেরা বলেন, ‘এতে আমরা বেশ খুশি এবং বিনামূল্যে বিদ্যুতের সংযোগ পেয়েছি।’
জেলা পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ডের প্যানেল চেয়ারম্যান ও চকরিয়া, পেকুয়া, বান্দরবানের লামার একমাত্র পরিচালক আলহাজ হায়দার আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ হচ্ছে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া। যার বিনিময়ে কোন হয়রানি এবং বাড়তি টাকা নেওয়া যাবে না।
কিন্তু যারা সরকারের এই মহতি উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করার তৎপরতায় লিপ্ত তাদেরকে শনাক্ত করার কাজে হাত দেওয়া হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে লামার ফাইতংয়ের ৯ জন নতুন গ্রাহকের কাছ থেকে হাতানো বাড়তি টাকা ফেরত দেওয়ায় ডিজিএমকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

পল্লী বিদ্যুতের চকরিয়া জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. মোসাদ্দেকুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান সরকারের নীতি হচ্ছে ‘আলোর ফেরিওয়ালা’র ব্যানারে কোন হয়রানি ছাড়াই বিনামূল্যে মাত্র পাঁচ মিনিটে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া। এই প্রকল্পটি শুরু হওয়ার পর ইতোমধ্যে আমার অফিস চকরিয়া, পেকুয়া, মাতামুহুরী ও বান্দবানের লামার ফাইতং ও ফাঁসিয়াখালীসহ ২০টি ইউনিয়নের প্রায় সাত হাজার গ্রাহককে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। বিনিময়ে এক টাকাও অতিরিক্ত নেওয়ার সুযোগ কাউকে দিইনি। যখনই কোন অভিযোগ এসেছে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে বিচ্ছিন্নভাবে ফাইতংয়ের ৯ জন গ্রাহকের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার খবর পেয়েই কতিপয় এক দালালকে শনাক্ত করে তাকে বাধ্য করেছি টাকা ফেরত দিতে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে, যাতে জনগণ এই বার্তাটি পায়।’

পাঠকের মতামত: